যারা আজ পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তারা যেন ভুলে গেছেন—পাকিস্তান একসময় আমাদের নির্মূল করার জন্য উঠে পড়েছিল

যারা আজ পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তারা যেন ভুলে গেছেন—পাকিস্তান একসময় আমাদের নির্মূল করার জন্য উঠে পড়েছিল
🇧🇩 ইতিহাসের রক্তাক্ত পর্ব: ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – পাকিস্তানের বর্বরতা ও বাঙালির প্রতিরোধ
যারা আজ পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তারা যেন ভুলে গেছেন—পাকিস্তান একসময় আমাদের নির্মূল করার জন্য উঠে পড়েছিল। আমরা যেন ভুলে না যাই, ইতিহাস রক্ত দিয়ে লেখা।
📜 ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১: পূর্ববাংলার এক অন্ধকার যুগ
ভারত বিভাগের পর পাকিস্তান গঠিত হয় দুই অংশে—পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনাকরত।
🗣️ ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮–১৯৫২)
পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষা বাতিল করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করতে চায়। ১৯৫২ সালে ঢাকায় ভাষার দাবি নিয়ে ছাত্ররা রাস্তায় নামলে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে। তাদের রক্তেই গড়ে ওঠে আমাদের জাতিসত্তা।
💰 অর্থনৈতিক শোষণ
পূর্ব পাকিস্তান প্রচুর রাজস্ব দিত, কিন্তু উন্নয়ন হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। আমাদের শ্রম, আমাদের সম্পদ লুট করে আমাদেরই অভুক্ত রাখা হতো।
👨‍⚖️ রাজনৈতিক বৈষম্য
৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। তার বদলে পাকিস্তান বাহিনী নৃশংস গণহত্যা চালায়।
🔥 অপারেশন সার্চলাইট – ২৫ মার্চ ১৯৭১
এই রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস, সাধারণ মানুষ—সবাইকে হত্যা করা হয়। ৩০ লাখ মানুষ নিহত, ২ লাখ মা-বোন ধর্ষণের শিকার, কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়।
💔 নারীদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন
নারীদের ধর্ষণ করা হয় অস্ত্র হিসেবে। হাজার হাজার নারী ধর্ষিত হন, গর্ভধারণ করেন, আত্মহত্যা করেন। এটা ছিল এক পরিকল্পিত অপারেশন—একটি জাতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা।
🕊️ মুক্তিযুদ্ধের গৌরব
এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি এক হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ও ভারতের সহায়তায় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
🧨 এবং আজ—বাংলাদেশিরাই পাকিস্তানকে সমর্থন করে?
আপনারা কী ভুলে গেছেন কারা আমাদের মায়েদের ধর্ষণ করেছিল? কারা আমাদের ভাইদের গুলি করেছিল? আজ যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিচ্ছেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অপমান করছেন, তাদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।
আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। ইতিহাসকে অস্বীকার করে কোনো জাতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের ইতিহাস গর্বের, রক্তের—তাকে বিকৃত করে পাকিস্তানের গুণগান করা মানেই মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা।

হ্যাঁ, যারা আজ কোনো না কোনোভাবে পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, তাদের একবার থমকে দাঁড়িয়ে ভাবা উচিত। তারা কি সেই ভয়াবহ ইতিহাস ভুলে গেছেন, যখন এই পাকিস্তানই আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল? ১৯৭১ সালের সেই রক্তঝরা দিনগুলোর কথা কি তাদের আর মনে নেই? মনে নেই সেই লক্ষ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, সেই মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, সেই ঘরছাড়া কোটি কোটি মানুষের আর্তনাদ?

পাকিস্তান শুধু একটি রাষ্ট্র ছিল না, ছিল একটি দানব, যে আমাদের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চেয়েছিল, আমাদের পরিচয় ধূলিসাৎ করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল এই সবুজ-শ্যামল বাংলা যেন আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। অপারেশন সার্চলাইটের নামে তারা যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা বিশ্বের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ কৃষক, ছাত্র থেকে শুরু করে শ্রমিক—কেউ তাদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পায়নি।

আমাদের মুক্তি সংগ্রাম কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনা আর নিপীড়নের ফল ছিল সেই যুদ্ধ। ভাষার জন্য আন্দোলন, স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম—এসবই ছিল আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে আমাদের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার মাটি। সেই রক্তভেজা পথ পেরিয়েই আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ।

আজ যখন কেউ পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের জয়ে উল্লাস করে, কিংবা তাদের কোনো সাফল্যে আনন্দিত হয়, তখন মনে প্রশ্ন জাগে—তারা কি একবারও ভাবেননি, এই দেশটির জন্মলগ্নের ইতিহাস আমাদের জন্য কতটা বেদনাবিধুর? এই দেশটির হাতেই তো আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রাণ দিতে হয়েছে। এই দেশটির সেনাবাহিনীর বুটের তলায় পিষ্ট হয়েছে আমাদের স্বপ্ন।

অবশ্যই খেলাধুলা বা সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক স্তরে বন্ধুত্বের বার্তা বহন করে। কিন্তু যখন সেই বন্ধুত্বের আড়ালে চাপা পড়ে যায় একটি জাতির রক্তক্ষয়ী ইতিহাস, তখন তা মেনে নেওয়া কঠিন। যারা আজ পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, একবার অন্তত সেই সময়ের কথা স্মরণ করুন। সেই ভয়াল রাতের কথা ভাবুন, যখন ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠেছিল। সেই পিতৃহীন সন্তানদের কথা ভাবুন, যারা আজও তাদের হারানো বাবাকে খুঁজে ফেরে। সেই ধর্ষিতা মা-বোনদের কথা ভাবুন, যারা সমাজের চোখে আজও অপাংক্তেয়।

আমাদের অতীত আমাদের পথ দেখায়। আমাদের ইতিহাস আমাদের সাহস যোগায়। আমরা বীরের জাতি, যারা নিজেদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। সেই আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তাই যারা আজ পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তাদের আবারও বলি—দয়া করে সেই নির্মূলের চেষ্টার ইতিহাস ভুলবেন না। আমাদের আত্মপরিচয়, আমাদের স্বাধীনতা—কোনো কিছুর বিনিময়েই যেন তা ম্লান না হয়

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply