top of page
Writer's pictureImran Chowdhury B.E.M

বাংলাদেশে - মাইনাস টু ফর্মুলা কি আবার উদিত হচ্ছে?


মাইনাস টু-এর প্রেতাত্মা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপে অনিশ্চয়তা এবং উত্তেজনা


বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এসে উপস্থিত। ২০০৭-২০০৯ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে শুরু হওয়া বিতর্কিত "মাইনাস টু" নীতির ছায়া আবারও দেখা যাচ্ছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে। এই নতুন সরকার আওয়ামী লীগ (আ.লীগ) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) - দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক শক্তিকে হ্রাস করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যা নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে শঙ্কা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

এই পদক্ষেপে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশাল রাজনৈতিক রদবদলের সম্ভাবনা সামনে আসছে। কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে মনে করছেন এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


"মাইনাস টু" নীতির উত্থান

"মাইনাস টু" ধারণার প্রথম উত্থান ঘটে ২০০৭-২০০৯ সালের এক-এগারোর সংকটকালে, যখন সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি - এই দুটি দলের প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে অপসারণের চেষ্টা করেছিল। জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে এই নীতি স্থায়ী হয়নি, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল এবং ভোটারদের রাজনৈতিক অধিকারকে সংকুচিত করেছিল।

আজ আবারও সেই নীতির ছায়া দেখা যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বর্তমান সরকার তরুণদের সমন্বয়ে নতুন কৌশলে আ.লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক আধিপত্য দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন মুখ ও কণ্ঠ নিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলে যে, এই ধরনের নীতির ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্নও হতে পারে।


বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক হুমকি

আ.লীগ ও বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। প্রতিটি দল দেশের জনগণের মধ্যে গভীর শিকড় গেড়েছে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, তারা এই দুই দলের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করার পরিকল্পনা করছে। এতে দুই দল প্রান্তিক অবস্থানে চলে যেতে পারে।

বিএনপির নেতারা এটিকে নিজেদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এই উদ্যোগ তাদের ভোটারদের ওপর বিভাজন তৈরি করছে। “এটা সংস্কার নয়, বরং আমাদের নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা,” মন্তব্য করেন এক সিনিয়র বিএনপি নেতা। "এটি আমাদের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত।"

আ.লীগের ভেতরেও নতুন নীতির প্রতি গভীর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এই পরিবর্তনের খবর শুনে অস্থির হয়ে পড়েছেন এবং নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছেন।


যুব নেতৃত্বের রাজনীতির নতুন ধারা নাকি কৌশলী পরিকল্পনা?

নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কৌশল তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত এক নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করছে। এই সরকার প্রথাগত নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে যুব নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যারা দুর্নীতি বিরোধী, স্বচ্ছতা এবং প্রগতিশীল মূল্যবোধকে উচ্চকিত করছে। তবে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন, এই উদ্যোগ অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে দেশের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধানে কতটুকু কার্যকর হবে।

অনেকেই মনে করেন, এই যুব নেতৃত্বের সীমিত অভিজ্ঞতা প্রভাবশালীদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করছে। “যুব নেতৃত্বের পেছনে বয়স বা অভিজ্ঞতার চেয়ে বড় একটি পরিকল্পনা আছে,” মন্তব্য করেন ঢাকার এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।


সাধারণ জনগণের উদ্বেগ

আ.লীগ ও বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারানোর বিষয়ে শঙ্কিত। তারা ভাবছেন, নতুন সরকারের নীতি তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করবে এবং দলের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে। চট্টগ্রামের এক বিএনপি কর্মী বলেন, "আমরা এই দলের জন্য অনেক কিছু করেছি, এখন আমাদের বলছে যে আমাদের প্রয়োজন নেই।"

গ্রামীণ বাংলাদেশে, যেখানে রাজনৈতিক আনুগত্য পারিবারিক বন্ধনের মতো দৃঢ়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দুর্বল করার প্রয়াস রাজনৈতিক ঝুঁকি বহন করছে। স্থানীয় নেতারা ভাবছেন, কমিউনিটি ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে মজবুত রাখার জন্য যুব নেতৃত্বের এই উদ্যোগ সঠিক পথ নয়।


জনমত: এটি কি বাস্তব পরিবর্তনের পথ নাকি পিছিয়ে যাওয়া?

“মাইনাস টু” নীতির পুনরায় উত্থান জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ মনে করেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সরিয়ে দিলে বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ ঘটবে। অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, প্রধান দুই দলের অনুপস্থিতিতে ভোটারদের জন্য অর্থবহ কোনো বিকল্প থাকছে না।


সামনে পথ: ভারসাম্য রক্ষা

বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশটির ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের সুযোগ পেয়েছে, তবে তারা যদি জনগণের বড় অংশকে অবজ্ঞা করে, তবে তা আরো



বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। প্রশ্ন থেকে যায়, এই পরিবর্তনের প্রচেষ্টা কি সত্যিকারের অগ্রগতির প্রতিফলন, নাকি এটি কেবল দেশকে পুনরায় সংকটের দিকে নিয়ে যাবে?

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি - এই দুই দলের ব্যতিরেকে বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে অগ্রসর হতে পারবে, নাকি এই নতুন ভাবনা পুরানো সংগ্রামকেই নতুন রূপে ফিরিয়ে আনবে?



ইমরান চৌধুরী বি ই এম একজন সম্মানিত কৌশলগত চিন্তাবিদ, যিনি ভূরাজনৈতিক বিষয়, ইতিহাস এবং প্রবাসী সম্প্রদায়ের বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বিশ্লেষণের জন্য প্রসিদ্ধ। বহু বইয়ের লেখক এবং এক হাজারেরও বেশি সংবাদপত্রের প্রবন্ধ রচয়িতা হিসেবে তিনি বৈশ্বিক রাজনীতিতে এক অভিজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যেখানে তিনি সামাজিক সংহতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির গতিশীলতার উপর আলোকপাত করেন। তার লেখায় ইতিহাস, সার্বভৌমত্ব, এবং বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভূমিকার সংযোগগুলো তুলে ধরা হয়। সাংস্কৃতিক পরিচয় ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রতি গভীর উপলব্ধি ইমরানকে সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ, কমিউনিটি ক্ষমতায়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম আলোচনার ক্ষেত্রে অগ্রণী কণ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

0 views0 comments

Comments


bottom of page