আমি লিখি, কারণ লেখা আমার অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমি লিখি, কারণ আমার ভেতরে জমে থাকা অভিজ্ঞতা, বেদনা, উপলব্ধি আর প্রতিজ্ঞা যদি কাগজে না আসে, তবে হয়তো আমি নিজেই পূর্ণতা পাই না।
আমার জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়, তুফান, যুদ্ধ আর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দগদগে ক্ষত। আমার শৈশব কেটেছে উদ্বাস্তু শিবিরে—কাঁদতে কাঁদতে দেশ হারানোর বেদনায়, না খেয়ে রাত পার করার যন্ত্রণায়। সেই বেদনার ভেতরেই আমি অনুভব করেছি মানুষের সীমাহীন সহ্যক্ষমতা, স্বপ্ন দেখার আশ্চর্য শক্তি, আর আশার জ্যোতি।
আমার পিতা ছিলেন একজন বীর সেনানায়ক, মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে লড়েছেন। আমার ভাই রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছেন। আমি নিজেও সেই রক্তাক্ত সময়ের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে একদিন জেনেছি, দেশের ইতিহাস শুধু ইতিহাসবিদদের লেখার বিষয় নয়—এটা আমাদের অস্তিত্বের অংশ। তাই আমি লিখি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে—আমার দেখা, শোনা, অনুভব করা কথাগুলো, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানে আমাদের স্বাধীনতা কোনো অনুগ্রহে আসেনি, এসেছে আত্মত্যাগ আর অমানবিক যন্ত্রণার বিনিময়ে।
আমি লিখি সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে—কারণ এ সমাজ, এ রাষ্ট্র, আমাদের চারপাশের জটিল বাস্তবতা প্রতিনিয়ত আমাকে তাড়িত করে। আমি দেখি কিভাবে ইতিহাস বিকৃত হয়, কীভাবে আদর্শ ভুল পথে চালিত হয়, কিভাবে সাধারণ মানুষ হারিয়ে ফেলে নিজের অবস্থান।
আমি লিখি কবিতা—কারণ কোনো কোনো অনুভব কেবল ছন্দেই জন্ম নেয়। প্রকৃতির প্রতিটি রং, পাখির গান, নদীর ঢেউ, বর্ষার প্রথম বৃষ্টি, কিংবা শীতের সকালের কুয়াশা—এই সবই আমার কলমে কবিতার রূপ নেয়। কবিতাই আমার আত্মার সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক স্থাপন করে।
আমি লিখি ভ্রমণ নিয়ে, কারণ আমি পৃথিবীর বহু প্রান্ত ঘুরেছি। আমি দেখেছি ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন জীবনধারা—আর সে সবই আমাকে দিয়েছে গভীর উপলব্ধি। আমি লিখি যেন সেই অভিজ্ঞতাগুলো শুধু আমার নয়, অন্যেরও হয়।
আমি লিখি এস্পিয়নাজ ও সামরিক কৌশল নিয়ে—কারণ আমি নিজে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ট্রেনিং, কৌশল, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, যুদ্ধনীতি—এসব আমার জীবনের অংশ ছিল, যা আমাকে দিয়েছে এক অন্যরকম অন্তর্দৃষ্টি।
আমার হাজার হাজার বই পড়া, গভীর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, ভূরাজনীতি বোঝার চর্চা আমাকে যেভাবে নির্মাণ করেছে, আমি বিশ্বাস করি তা লিখে গেলে হয়তো কেউ একদিন সেই আলোর ছায়া খুঁজে পাবে নিজের জীবনে।
আমি লিখি—কারণ আমি ইমরান চৌধুরী। একজন যোদ্ধার সন্তান, ইতিহাসের একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী, একজন পথিক, একজন ভাবুক, আর একজন মানুষ, যার কলম কখনো থেমে থাকে না।
এই লেখাই আমার অস্তিত্বের রূপরেখা।