ঢাকার বুকে গুপ্তচর যুদ্ধ, রোমান্স আর রক্তের প্রতিশোধ

ঢাকার বুকে গুপ্তচর যুদ্ধ, রোমান্স আর রক্তের প্রতিশোধ

রাতুল বনাম খোদা বক্স — 

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের তিন তলার কেবিন নম্বর বাহাত্তুর। অন্ধকারের মধ্যে নীরব এক ঘর। হালকা আলোয় চোখ খুললো এক যুবক—রাতুল। বুকের পাঁজর যেন আগুনে ঝলসে গেছে, কাঁধে ব্যান্ডেজ, হাতে সুচ ঢোকানো। তার মনে পড়ছে না—সে এখানে কিভাবে এল।

তিন দিন ধরে কোমায় ছিল সে। ধানমন্ডির পুরনো আর্কিওলজি সাইটে গিয়েছিল একটি আন্তর্জাতিক টার্গেট নিরসন অভিযানে। কিন্তু ধরা খেল!

শত্রু ছিল একজন রক্তপিপাসু পাকিস্তানি এজেন্ট—খোদা বক্স। ছয় ফুট আট ইঞ্চির দৈত্য, পাকিস্তানি এসএসজি-এর সাবেক কমান্ডো, কারাটে-মার্শাল আর্টে গুরু। আর এই জিহাদী অপারেটিভ ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশের হৃদয়ে—তার মিশন? বাংলাদেশের তরুণদের ভুল পথে ঠেলে দিয়ে রাষ্ট্রে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।

রাতুল সেই ছেলেগুলোর একজন হতে পারতো। কিন্তু সে ভিন্ন।

পূর্বপুরুষ মুক্তিযোদ্ধা, নিজের পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ইজরায়েল, জার্মানি আর আমেরিকায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এখন সে একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর—যার জীবন রাতের অন্ধকারে আগুন খেলে। তার অফিস বারিধারায়, তবে হেডকোয়ার্টার গোপন এক জায়গায়—যার কথা কেবল একজন জানে।

নাতাশা ইয়াসমিন কাপালানস্কি

ফ্রেঞ্চ গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এজেন্ট, এক বিস্ফোরক সৌন্দর্যের মিশ্রণ—ইহুদি, মুসলিম, প্যালেস্টিনিয়ান রক্তের মিশেলে গড়া আগুন ঝরানো নারী। শুধু প্রেমিকা নয়, সে রাতুলের ব্যবসায়িক পার্টনার, বান্ধবী, আর অনেক সময় শরীরী ও মানসিক প্রশান্তির আশ্রয়।

প্রেমের গল্পটা সহজ ছিল না। এক রাতে প্যারিসে দেখা, ল্যুভ মিউজিয়ামের সামনে হঠাৎ ঝড়ের মতো শুরু হয় কথাবার্তা—সেখান থেকে এক সিগারেটের খোলস, শরীরী ইঙ্গিত, আর তারপর হোটেল লা স্যাঁটাল-এর বিছানায় ছুটে যাওয়া। শরীরের ভাষা দিয়ে তাঁরা একে অপরকে চিনে নিয়েছিল।

“তুমি জানো,” একবার নাতাশা বলেছিল, “তোমার চোখে আমি একটা যুদ্ধ দেখি—সেই যুদ্ধ যা আমাকে ভেতর থেকে পাগল করে দেয়।”

রাতুলের হাসি ছিলো নীরব কিন্তু ধারালো—“তুমি আমার সবচেয়ে বিপজ্জনক মিশন।”

সেই সম্পর্ক এখন গভীর, কৌশলী এবং যৌন টানাপোড়েনময়। অফিসের কনফারেন্স রুম থেকে শুরু করে বারিধারার বাথটাব—যেখানেই সুযোগ মেলে, ওরা গলে যায় একে অপরের স্পর্শে।

**

এবারের মিশন অবশ্য শুধুই সেক্সি রোমান্স নয়—এটা জীবন-মৃত্যুর লড়াই। মালটা থেকে ‘ফিল’ নামের রাতুলের বন্ধুর পাঠানো মেইল—“Target: Khoda Bux. Neutralize. $150,000.”

এইবার ঢাকার বুকে শুরু হয় গুপ্তচর ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। খোদা বক্স তার মুখোশ পরে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় বক্তৃতা দিচ্ছে। তার ভাষায় মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে একদল তরুণ। অনেকেই জানেই না—এই মানুষটি ঢুকে পড়েছে টেকনাফ হয়ে, সীমান্ত দিয়ে।

রাতুল ছদ্মবেশে যায় আর্কিওলজি সাইটে। পরিকল্পনা ছিল স্নাইপার দিয়ে দূর থেকে কাজ সেরে ফেলা। কিন্তু কেউ একজন তার অবস্থান ফাঁস করে দেয়। হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ—সব ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

তিন দিন অচেতন থাকার পর, সে উপলব্ধি করে—“এ লড়াই আমাকে শেষ করতেই হবে।”

**

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সে ফিরে আসে নাতাশার কাছে।

নাতাশা তখন এক লাল সিল্কের গাউনে, চোখে ধোঁয়াটে কাজল, ঠোঁটে ক্লাসিক ফরাসি সিগারেট। রাতে তারা মিলিত হয়—প্রথমে ঠোঁট, পরে শরীর, তারপর আবার চোখে চোখ রেখে প্রতিজ্ঞা—”Let’s finish this, together.”

নাতাশা অস্ত্র দেয়, নির্দেশনা দেয়, একপাশে দাঁড়িয়ে তার প্রেমিককে প্রস্তুত করে প্রতিশোধের জন্য।

**

রাতুল এবার ঢুকে পড়ে মোহাম্মদপুরের একটি গোপন মক্তবে, ছদ্মবেশে ছাত্র সেজে।

চারদিন সে আত্মগোপন করে।

তার শরীরে উত্তেজনার সাথে সাথে ক্ষুধা—প্রেমের, প্রতিশোধের, আর হয়তো সামান্য নাতাশার শরীরের—যার কণ্ঠ মাঝে মাঝে ফোনে ফিসফিস করে বলে—“Kill him, and come back to me. I’ll be waiting. Without clothes.”

**

শেষ রাত। খোদা বক্স একা, সামনে খোলা আরবি হাদিসের বই।

রাতুল ছায়ার মত ঢুকে পড়ে।

“সালাম খোদা বক্স,” সে বলে। “তোমার সময় শেষ।”

বাকিটা হয়ে ওঠে এক রক্তক্ষয়ী লড়াই—ঘরের টেবিল, জানালা, ছাদ—সব ভেঙে পড়ে। খোদা বক্স ভয়ানক, কিন্তু রাতুল এখন আর শুধু এক প্রেমিক বা গোয়েন্দা নয়—সে হয়ে উঠেছে এক মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরি।

শেষে এক ছুরির কোপে খোদা বক্সের পতন।

**

খবরে আসে—

“ঢাকার মোহাম্মদপুরে ধরা পড়েছে একজন পাকিস্তানি জিহাদি এজেন্ট। র‍্যাবের গোপন অভিযানে সে আটক। সূত্র বলছে, তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।”

রাতুলের নাম নেই কোথাও।

সে ফিরে আসে নাতাশার কাছে।

নাতাশা তখন বিছানায় সাদা চাদরে, এক গ্লাস ওয়াইন হাতে।

রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে—“So, who wins?”

রাতুল হাসে—“Love wins. Duty wins. And sometimes… lust wins too.”

গল্পটা শুধু গুপ্তচরবৃত্তির নয় — এটা আমাদের প্রজন্মের ভেতরের যুদ্ধের প্রতীক

✍️ রাইহান আজমী

এই গল্পটা শুধু এক গুপ্তচর অভিযানের নয়। এটি অনেক বেশি কিছু। এটা এক প্রতীক—আমাদের সময়ের, আমাদের আত্মার, আমাদের প্রজন্মের।
এটি বিশ্বাস বনাম বিভ্রান্তির যুদ্ধ। প্রেম বনাম ঘৃণার দ্বন্দ্ব। দেশপ্রেম বনাম ষড়যন্ত্রের সংঘর্ষ।
এবং সবচেয়ে বড় কথা—এই গল্পটা প্রমাণ করে, ভালোবাসা, শরীর, এবং নৈতিকতা—সব একসাথে দাঁড়াতে পারে এক সাহসী প্রতিরোধে।

🧠 প্রজন্মের ভেতরের যুদ্ধ: কেউ জানে না, অথচ সকলে যুদ্ধে আছি

রাতুলের মতো যুবকেরা আজকের বাংলাদেশে, এমনকি গোটা বিশ্বজুড়েই এক মানসিক ও আদর্শিক যুদ্ধে লিপ্ত।
তারা বই পড়ে না—কিন্তু তারা চোখে দেখে। তারা বাস্তবতা থেকে পালায় না—তারা সেটা ফিল্টার করে বোঝে। তারা খোঁজে সত্য, কিন্তু সেটা ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও, বা অন্ধকার ফোরাম থেকে খুঁজে নিতে বাধ্য হয়।

রাতুল হচ্ছে সেই প্রজন্মের প্রতিনিধি—যে না হয় রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায় ছিল, না হয় মুক্তিযোদ্ধার ছেলে।
সে একজন ‘সারভাইভার’।
সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে—সে কারো পেছনে হাঁটবে না। নিজের পথ নিজেই তৈরি করবে। তার বেঁচে থাকার যুদ্ধটা শুরু হয় আত্মবিশ্বাস দিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে বুঝতে শেখে—এই যুদ্ধ শুধু বেঁচে থাকার নয়, এটা অস্তিত্ব রক্ষার, আদর্শ টিকিয়ে রাখার।

🔥 বিশ্বাস বনাম বিভ্রান্তি: নতুন প্রজন্ম কাকে বিশ্বাস করবে?

খোদা বক্স নামের প্রতিপক্ষ শুধু একজন মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞ বা আন্তর্জাতিক টেররিস্ট নয়—সে একটা ‘আদর্শিক ভাইরাস’।
সে ঢুকে পড়ে যুবকদের চিন্তাজগতে।
তার কথা, তার ভাষা, তার চেহারা—সব মিলিয়ে একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। সে ‘নুরানী চেহারা’ আর আরবি ভাষায় হাদিস পড়ে মনে করিয়ে দেয়, যে সে এক ‘আল্লাহর সৈনিক’। অথচ তার ভিতরে শুধু ঘৃণা আর ধ্বংস।

এই বিভ্রান্তির মাঝে তরুণেরা পড়ে যায় দ্বিধায়—কাকে বিশ্বাস করবে? বাবা-মা’র মূল্যবোধ? না কি ইউটিউবের ‘উস্তাদ ভাই’? না কি ফেসবুকের ধর্মীয় গোষ্ঠী?

রাতুল জানে, এই যুদ্ধটা বাইরে নয়—এটা মাথার ভেতরে।
সে জানে, বিশ্বাসকে বাঁচাতে হলে, বিভ্রান্তিকে এক্সপোজ করতে হবে।

❤️ প্রেম বনাম ঘৃণা: নাতাশা শুধুই রোমান্স না, সে এক প্রতিরোধের রূপক

রাতুলের আর নাতাশার সম্পর্ককে আপনি যদি শুধুই সেক্স বা শরীর বলে ভাবেন, তাহলে আপনি ভুল করবেন।
নাতাশা হলেন সেই আলোর প্রতীক, যে প্রেমিকাকে ভালোবাসে তার সাহসের জন্য। সে জানে, প্রেমিক কখনও শুধুই কোমল হয় না—প্রয়োজনে সে অস্ত্রও ধরে।

তাদের শরীরী সম্পর্ক—তাতে উত্তাপ আছে, তবে তা অর্থহীন নয়।
তারা একে অপরকে ছুঁয়ে দেয় যেমন চাহনিতে, তেমনই আদর্শে।
তাদের মিলন—একধরনের বিশ্বাস, একধরনের স্বপ্ন।
শরীর শুধু বাহন, ভেতরে আছে ভালোবাসা এবং যুদ্ধে ফেরার শক্তি।

তাদের প্রেমে আছে ঝুঁকি, আছে বিশ্বাসঘাতকতার ভয়, আছে পরবর্তী ভোর না দেখার সম্ভাবনা।
কিন্তু সেই রাত্রিগুলোতে তারা তৈরি হয় যুদ্ধের জন্য। যেমন দুজন যোদ্ধা, বিছানায় নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেম করে।

🇧🇩 দেশপ্রেম বনাম ষড়যন্ত্র: কে রক্ষা করবে এই দেশটাকে?

আজকের বাংলাদেশে সত্যিকারের দেশপ্রেম আর রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডার মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অনেকে দেশপ্রেমের নামে শুধু সরকার বন্দনা করে।
আবার কেউ কেউ বিরোধিতার নামে পুরো দেশের অস্তিত্বকে অপমান করে।

রাতুল জানে—তার দেশ সোনার হরিণ না। এই দেশের রাস্তায় ধুলো, বাতাসে ক্লান্তি, আর চারপাশে হতাশা।
তবুও সে এই দেশকে ভালোবাসে।
কারণ সে জানে—এই দেশই তার ঘর, তার ইতিহাস, তার রক্তের পরিচয়।

খোদা বক্সদের মতো ষড়যন্ত্রকারীরা এই ভালোবাসার জায়গাতেই আঘাত হানে।
তারা চায়, যুবকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাক—বাকি থাকুক শুধু হতাশা আর র‍্যাডিকাল চিন্তাধারা।
রাতুল তাদের সেই পরিকল্পনায় চির ধরে। সে বলে, “তোমরা ভুল করেছো। আমি এখানেই থাকবো। লড়বো। জিতবো।”

⚖️ নৈতিকতা বনাম বাস্তবতা: সবকিছুর মাঝে সাহসী প্রতিরোধ

এই গল্প শেষ হয় লড়াই দিয়ে।
এক গুপ্তঘাতক মারা যায়, আরেক গুপ্তচর চুপচাপ ফিরে যায় তার গোপন ঘাঁটিতে।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই যুদ্ধ কি আসলেই শেষ হলো?
না। কারণ এই যুদ্ধ বাইরের নয়, ভিতরের। এই যুদ্ধ আমাদের চিন্তাজগতে, আমাদের নৈতিকতায়।
আমরা কি সত্যিই জানি আমরা কাকে অনুসরণ করছি? আমরা কী বিশ্বাস করি?
আমরা কি শুধু শরীর খুঁজি, না আত্মা?
আমরা কি প্রেমিক হতে চাই, না যোদ্ধা?

গল্পটা আমাদের এই প্রশ্নগুলো করতে শেখায়।

রাতুল আমাদের চোখে চোখ রাখে। সে আমাদের বলে—
“ভালোবাসো। কিন্তু চোখ খোলা রেখো।
যুদ্ধ করো। কিন্তু মনুষ্যত্ব হারিও না।
দেশকে ভালোবাসো। কিন্তু চোখ বন্ধ করে নয়—জেগে থেকে।”

শেষ কথা:

এই গল্পটা শুধু এক গুপ্তচর অভিযানের নয়। এটা আমাদের প্রজন্মের ভেতরের যুদ্ধের প্রতীক—বিশ্বাস বনাম বিভ্রান্তি, প্রেম বনাম ঘৃণা, দেশপ্রেম বনাম ষড়যন্ত্র। এবং সবচেয়ে বড় কথা—এই গল্প বলে, শেষ পর্যন্ত ভালোবাসা, শরীর, এবং নৈতিকতা—সব একসাথে দাঁড়ায় এক সাহসী প্রতিরোধে।

📌 দায়িত্বভার অব্যাহতি (Disclaimer):
এই গল্পটি সম্পূর্ণরূপে একটি কাল্পনিক রচনা। এর ঘটনাপ্রবাহ, চরিত্র, নাম, স্থান এবং পরিবেশ সম্পূর্ণ লেখকের কল্পনার ফল। বাস্তব জীবনের কোনো ব্যক্তি, সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা কোনো ঘটনার সঙ্গে এর সামঞ্জস্য থাকলে তা নিছক কাকতালীয়। কারো অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্য এ লেখায় নেই।


🔗 আপনি যদি চান, এই গল্পের পুরো নোভেল ভার্সন প্রকাশিত হবে খুব শীঘ্রই আমার ওয়েবসাইটে। সাইন আপ করুন আপডেট পেতে।

📩 আপনার মতামত বা মন্তব্য লিখুন নিচে — আপনি হলে কী করতেন? প্রেম বাঁচাতেন, না দেশ?

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *