লেঃ ইমরান আহমেদ চৌধুরী বি ই এম (অবঃ)
ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি গণমানুষের মুক্তির সংগ্রাম, একটি দখলদার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী প্রতিরোধ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা, গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে এক অভূতপূর্ব প্রতিরোধ আন্দোলন, যা অবশেষে রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধে। তবে এই যুদ্ধের বাস্তব কৌশলগত ও রাজনৈতিক পটভূমি বিশ্লেষণ করলে একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসে: ভারতের সহায়তা ছাড়া কি এই যুদ্ধে জয় সম্ভব ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রয়াসেই এই প্রবন্ধে ভারতের সামগ্রিক ভূমিকা – রাজনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, আর্থিক ও মানবিক – বিশ্লেষণ করা হবে।
১. রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা
বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়
২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃত্ব ভারতে পালিয়ে এসে মুজিবনগর সরকার গঠন করে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় মুজিবনগর সরকার এবং সেক্টর কমান্ডাররা ভারতীয় ভূখণ্ড থেকেই সমগ্র যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
প্রমাণ:
- মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়, ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় শপথ নেয়।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের ওপর গণহত্যা শুরু হলে প্রায় ১ কোটিরও বেশি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভারত এই বিশাল মানবিক বিপর্যয়কে শুধু সহানুভূতির দৃষ্টিতে নয়, বরং কৌশলগত ও নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে।
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, এই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বের আটটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর করেন—সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা—এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করেন। এ সময় তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এবং মার্কিন কংগ্রেসে পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে বক্তব্য দেন। এই কূটনৈতিক চাপ পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে করে তোলে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ভারতের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯৭১ সালের আগস্টে স্বাক্ষরিত Indo-Soviet Treaty of Peace, Friendship and Cooperation। এই চুক্তি পাকিস্তানের প্রধান মিত্র চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রাখে। বলা চলে, এটি ছিল এক কৌশলগত ঢাল, যা ভারতের সামরিক পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক বৈধতা ও সুরক্ষা দেয়।
২. সামরিক সহায়তা ও সরাসরি যুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধের সফল বাস্তবায়নে ভারতের সামরিক সহায়তা ছিল নিঃসন্দেহে নির্ধারক। মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা অস্ত্র, গোলাবারুদ, প্রশিক্ষণ, রেশন, গাড়ি ও যুদ্ধকৌশলের জন্য সম্পূর্ণরূপে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ভারত প্রথমেই পূর্ব পাকিস্তানে একটি “প্রক্সি ওয়ার” পরিচালনা করে যেখানে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণ চালায় এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করে দেয়। এই কৌশলিক যুদ্ধ প্রস্তুতি ছাড়া প্রধান সামরিক বিজয় অসম্ভব ছিল।
ডিসেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনী সরাসরি যুদ্ধ শুরু করলে, যুদ্ধের গতিপথ একেবারে পাল্টে যায়। প্রায় ১.৫ লক্ষ ভারতীয় সেনা অংশগ্রহণ করে পূর্ব পাকিস্তানে তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায়—উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ফ্রন্টে। এই সমন্বিত আক্রমণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য ছিল এক চূড়ান্ত ধ্বংসাত্মক ধাক্কা।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষ নেতৃত্ব, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও উচ্চ মনোবল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একযোগে যুদ্ধ পরিচালনা করে ১৩ দিনের মধ্যে পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। এটি সামরিক ইতিহাসে অন্যতম দ্রুত বিজয় অর্জনের ঘটনা।
মুক্তিবাহিনীর সেক্টর ভিত্তিক অবস্থান:
ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সেক্টরভিত্তিক ঘাঁটি তৈরি হয়, যেমন:
- সেক্টর ১ – সাব্রুম (ত্রিপুরা)
- সেক্টর ২ – মেলাঘর (ত্রিপুরা)
- সেক্টর ৩ – তেলিয়াপাড়া (সিলেট সীমান্ত)
- সেক্টর ৪ – কৈলাশশহর (ত্রিপুরা)
- সেক্টর ৫ – বসতলা (মেঘালয়)
- সেক্টর ৬ – বুড়িমারী (রংপুর সীমান্ত)
- সেক্টর ৭ – তরঙ্গপুর (দিনাজপুর সীমান্ত)
- সেক্টর ৮ – বেনাপোল (যশোর সীমান্ত)
- সেক্টর ৯ – হোসনাবাদ (খুলনা সীমান্ত)
এ সকল সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, রেশন ও চিকিৎসা সেবা ভারতীয় সেনা ও বিএসএফ এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হত। এছাড়া, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও BSF সরাসরি যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করে।
৩. বিমান ও নৌবাহিনীর অবদান
ভারতের বিমান ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযান মুক্তিযুদ্ধের একটি মৌলিক স্তম্ভ ছিল।
- Operation Cactus Lily: ভারতীয় বিমানবাহিনী পূর্ব ফ্রন্টে পাকিস্তান বিমান ঘাঁটি, সরবরাহ কেন্দ্র ও রাডার স্টেশন ধ্বংস করে দেয়।
- Operation Trident ও Python: ভারতের নৌবাহিনী করাচি বন্দরে রাতের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, যার ফলে পাকিস্তান নৌবাহিনী কার্যত অক্ষম হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ‘কিলো ফ্লাইট‘ ইউনিট গঠনের ক্ষেত্রেও ভারতের বিমান প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ইউনিট চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে সফলভাবে বোমা বর্ষণ করে।
৪. প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহায়তা
ভারতের RAW (Research and Analysis Wing) ও BSF (Border Security Force) মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের স্যাটেলাইট ইমেজ, রুট ম্যাপ, রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদিতে সহায়তা করে।
এছাড়া, ভারতের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা কৌশল, অস্ত্রচালনা, বোমা তৈরি, স্নাইপিং ইত্যাদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত পেশাদার এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলার ভিত্তি।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ৫০টিরও বেশি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খোলা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- টেলিয়াপাড়া
- শিলিগুড়ি
- আগরতলা
- বনগাঁ
- ধুবরি
এসব ক্যাম্পে প্রায় ১ লাখের বেশি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এই প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সাহায্য ছাড়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হত না।
৫. শরণার্থী সমস্যা ও মানবিক সহায়তা
ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক কোটি শরণার্থীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল ভারতের জন্য এক অভাবনীয় চ্যালেঞ্জ। তবুও ভারত মানবিক দায়িত্ব পালন করে শত শত শিবির নির্মাণ করে।
বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা সংস্থার সহায়তায় ভারত শরণার্থীদের জন্য সীমান্তে হাসপাতাল, স্কুল, এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে। এ সময় ভারতের গণমাধ্যম, যেমন Anandabazar Patrika, The Statesman, Times of India শরণার্থীদের দুর্দশা বিশ্বের কাছে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
৬. যুদ্ধ–পরবর্তী পুনর্গঠন ও অবকাঠামো সহায়তা
স্বাধীনতা–পরবর্তী বাংলাদেশে অবকাঠামো ছিল সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর যোগাযোগব্যবস্থা, রেললাইন, রাস্তাঘাট, টেলিকম সেবা পুনঃস্থাপন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক কার্যক্রম চালুর জন্য ভারত প্রাথমিক আর্থিক সহায়তা দেয়, যার ফলে দ্রুত আর্থিক লেনদেন ও মুদ্রাব্যবস্থা চালু হয়। এছাড়া ভারতের ডাক বিভাগ ও রেল বিভাগ বাংলাদেশে তাদের পরামর্শ ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে।
৭. ভারতীয় সৈন্যদের আত্মত্যাগ
ভারতীয় সেনাবাহিনীর আনুমানিক ৩,০০০ সৈন্য শহীদ হন এবং ১২,০০০ এর অধিক আহত হন। এই আত্মত্যাগ নিছক সামরিক সহযোগিতা নয়, বরং এক জাতির মুক্তির পথে আরেক জাতির রক্তাক্ত অংশীদারত্বের চূড়ান্ত নিদর্শন।
ঢাকা, কুষ্টিয়া, যশোর, সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা প্রভৃতি স্থানে ভারতীয় শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ এখনও এই আত্মত্যাগের সাক্ষ্য বহন করে।
৮. বিকল্প বাস্তবতা: যদি ভারত সহায়তা না করত?
এই প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ: যদি ভারত সহায়তা না করত, তবে কী ঘটতে পারত?
১. মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গণহত্যা আরও তীব্র হতো।
২. আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অবৈধভাবে “বিদ্রোহ” হিসেবে দেখত।
৩. পাকিস্তান পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়লে পূর্ব পাকিস্তানে পুরো শক্তি প্রয়োগ করতে পারত।
৪. মুক্তিবাহিনী অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের অভাবে কৌশলগত বিজয় অর্জন করতে পারত না।
৫. চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারত এবং ভূ–রাজনৈতিক ভারসাম্য বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়াত।
এই বিকল্প বাস্তবতা আমাদের আরও দৃঢ়ভাবে বুঝিয়ে দেয় যে ভারতের ভূমিকা নিছক সহযোগিতা নয়, ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান স্তম্ভ।
৯. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আর্থিক ব্যয়
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আর্থিক ব্যয় ছিল বিপুল ও বহুমাত্রিক। প্রথমত, মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র–গোলাবারুদ, রেশন, চিকিৎসা ও বেতন বাবদ ভারতের ব্যয় হয় কয়েক শত কোটি রুপি, কারণ প্রায় ১ লাখেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে ভারত প্রশিক্ষণ দেয় এবং যুদ্ধ পরিচালনার সমস্ত লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়। দ্বিতীয়ত, প্রায় ১ কোটির বেশি শরণার্থীর খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা, পরিবহন ও প্রশাসনিক খরচ মেটাতে ভারতের ব্যয় হয় আনুমানিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আজকের বাজার মূল্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য। তৃতীয়ত, বিশ্বের নানা দেশে কূটনৈতিক সফর, প্রচার ও জনমত গঠনে ভারতের খরচ ছিল লক্ষ লক্ষ ডলার, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর ইউরোপ ও আমেরিকা সফরে। চতুর্থত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর চারটি কোর, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর অপারেশন, গোলাবারুদ, জ্বালানি, পরিবহন, যুদ্ধ সরঞ্জাম ও রসদ সরবরাহ বাবদ ব্যয় ছিল বহু বিলিয়ন ডলার। এই পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানে প্রায় ১.৫ লক্ষ সেনা মোতায়েন করা হয়। পঞ্চমত, ৯০,০০০ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীর তিন বছর যাবত আবাসন, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করে ভারত সরকার, যার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়ায়। সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মোট আর্থিক ব্যয় একাধিক বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে, প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার (১৯৭১ সালের মান অনুযায়ী), যা বর্তমান মূল্যে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়েছে, এটি নিঃসন্দেহে সত্য। কিন্তু একটি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য কেবলমাত্র সাহস ও দেশপ্রেম যথেষ্ট নয় – প্রয়োজন অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, কৌশল, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং বাস্তবায়নের রসদ। এ সকল উপাদানের অভাব থাকলে স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরা থেকে যেত।
ভারতের নৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, মানবিক ও আর্থিক সহায়তা ছাড়া ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয় সম্ভব ছিল না বললেই সত্যের অপমান হয় না, বরং এটাই ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা।
রেফারেন্স:
১. সিদ্দিক সালিক – উইটনেস টু সারেন্ডার, ১৯৭৭।
২. মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ – সাক্ষাৎকারসমূহ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
৩. বি. এন. মেহরিশ – ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক, সাউথ এশিয়ান পাবলিশার্স।
৪. ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় – ভারত–সোভিয়েত মৈত্রী ও শান্তিচুক্তি, ১৯৭১।
৫. ভারত রক্ষাক সংরক্ষণাগার – www.bharat-rakshak.com
৬. এয়ার ভাইস মার্শাল এ. কে. খন্দকার – ১৯৭১: ভেতরে বাইরে।
৭. বাংলাদেশ সরকার – মুক্তিযুদ্ধের নথিপত্র: সেক্টর কমান্ডারদের দলিল।
৮. ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় – ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সরকারি দলিল।
৯. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারতের ভূমিকা, জার্নাল অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ২০১০।
১০. লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে. এফ. আর. জ্যাকব – সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: বার্থ অফ অ্য নেশন, ১৯৯৭।
আশফাক এইচ. (২০১২)। মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং জাতিসংঘ। প্রথমা প্রকাশন।
বক্সি জে. (১৯৭৭)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সোভিয়েত মনোভাব: সোভিয়েত সংবাদপত্রের বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ। দ্য ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স, ৩৮ (০২), পৃ. ১৭৯—১৯৯।
বোস এস. (২০০৫)। হিংসার বিশ্লেষণ: ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধের একটি পর্যালোচনা। ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি, ৪০ (৪১), পৃ. ৪৪৬৩—৪৪৭১।
হোসেন এম. (২০০৯)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: একটি নৈতিক বিষয়। ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি, ৪৪ (০৫), পৃ. ২৬—২৯।
২৬৬ দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা (২০০৪)। (ইতিহাস ও প্রামাণ্য দলিল)। সম্পাদক: মোহাম্মদ নুরুল কাদের। ঢাকা: মুক্ত প্রকাশন।
ইসলাম আর. (১৯৮৫)। স্বতন্ত্রতাবাদী আত্মনির্ধারণ: কাটাঙ্গা, বিয়াফ্রা এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা। জার্নাল অফ পিস রিসার্চ, ২২ (০৩), পৃ. ২১১—২২১।
লোকোভা আই.ভি. (২০০৯)। বাংলাদেশ সংকটকালীন সময়ে ভারত–সোভিয়েত সম্পর্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। মানবিক গবেষণার বৈজ্ঞানিক সমস্যা, সংখ্যা ৯–২, পৃ. ৪৪—৫০।
মারওয়া ও. (১৯৭৯)। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ, ১৯৭১—১৯৭২। মডার্ন এশিয়ান স্টাডিজ, ১৩ (০৪), পৃ. ৫৪৯—৫৮০।
পানিচকিন ইউ.এন., মুসায়েভ এফ.এ. (২০১৩)। ১৯৭১ সালের ভারত–পাকিস্তান সামরিক সংঘাত: পাকিস্তানের জাতীয় ট্র্যাজেডি এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক। মৌলিক গবেষণা, সংখ্যা ১০–৭, পৃ. ১৬০৭—১৬১০।
সাইকিয়া ওয়াই. (২০০৪)। নীরবতার আর্কাইভ ছাড়িয়ে: বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সহিংসতা নিয়ে বর্ণনাগুলি। হিস্ট্রি ওয়ার্কশপ জার্নাল, ৫৮ (০৩), পৃ. ২৭৫—২৮৭।
সালাম এ. (২০০৮)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় জনগণের ভূমিকা। ডায়ালগ, ১০ (২)।
URL: http://www.asthabharati.org/Dia_Oct%2008/sal.htm (সংগ্রহের তারিখ: ১২.০৯.২০১৬)।
লেখকঃ
লেফটেন্যান্ট ইমরান আহমেদ চৌধুরী বিইএম (অবঃ)একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও ভূ–রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি বিশেষভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস—বিশেষত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে থাকেন। সাবেক একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর লেখা সমূহে উঠে আসে বাস্তব অভিজ্ঞতা, কৌশলগত বিশ্লেষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মন্তব্য। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক এবং যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সমাজসেবক, যিনি Cohesive Society CIC নামক একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সংস্থা ব্রিটিশ–বাংলাদেশি ও প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।